এর আগে একটু উপক্রমণিকা দরকার।
Macedonia’র রাজা Phillip নিজের দেশে এক শক্তিশালী
সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন। প্রতিবছরই কোনও না কোন প্রতিবেশী দেশের
সঙ্গে যুদ্ধ লেগেই ছিল। গ্রীসের একমাত্র Sparta ছাড়া আর সব নগর
রাষ্ট্রই Macedonia’র বশ্যতা স্বীকার করে। কিন্তু এদেরকে পুরোপুরি
শাসনের অধীনে না এনে, এদের সাথে এক মিত্রতার চুক্তি হয় – যা
ইতিহাসে Corinthian League নামে খ্যাত। Phillipএর প্রধান উদ্দেশ্য
পারস্য দেশ অধিকার। Corinthian Leagueএর এই প্রচেষ্টায় পুরো
সমর্থন ছিল। স্বাভাবিক কারণেই - Darius ও Xerexes আক্রমণ আর
গ্রীসের গৃহযুদ্ধে (Peloponnesian War) পারস্যের অংশগ্রহণ- সমস্ত
গ্রীস দেশগুলোই পারস্যের ওপর বিমুখ। কিন্তু ৩৩৬ অব্দে আততায়ীর
হাতে Phillip প্রাণ হারান। আলেকজান্ডারেরে বয়স তখন মাত্র কুড়ি
বছর। রাজা হিসেবে অনেকেই তাকে মানতে চায় না। পিতার দুই সুহৃদ
– Antipator ও Permenionএর সাহায্যে অনেক কূটনৈতিক খেলার পর,
আলেকজান্ডার সিংহাসন পান। কিন্তু দেশে থাকলেই বিপত্তি – যে কোনও
সময়ে হয় পিতার মতো আততায়ীর হাতে প্রাণহানি অথবা সিংহাসন হারানো।
তাই সিংহাসনে উঠেই আলেকজান্ডারের ঘোষণা – তিনি পিতার অপূর্ণ
কাজ, পারস্য অভিযান অবিলম্বে আরম্ভ করবেন। Antipatorএর হাতে
Macedonia পরিচালনার ভার দিয়ে ৩৩৫ অব্দে সেনাবাহিনী নিয়ে বেরিয়ে
পড়েন – আর দেশে ফেরা হয় নি। তিনি পারস্য সম্রাট তৃতীয় দরায়ুস
কে পরাস্ত করে বিপুল Achaemenid (ফার্সিতে হাকিমানিসিয়া) সাম্রাজ্য
দখল করেন। এ ছাড়া মিশর, ব্যাবিলন, মিডিয়া, ব্যাকট্রিয়া আর ভারতের
উত্তর পশ্চিম অঞ্চল আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ভূমধ্যসাগরের উপকূল অঞ্চলের Phoenician নগর রাষ্ট্র সমূহও তার
অধীনে আসে। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের পর, ৩২৪ অব্দে ব্যবিলনকে
তার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সাম্রাজ্য পরিচালনার
কাঠামো তৈরি আরম্ভ করেন। কিন্তু সমস্ত অধিকৃত অঞ্চল একীভূত করে,
শাসন রাজধানীর অধীনে আনার আগেই ৩২৩ অব্দের জুন মাসে, মাত্র কয়েক
দিনের অসুস্থতায় ব্যাবিলন শহরে আলেকজান্ডার পরলোক গমন করেন।
মৃত্যুর আগে উত্তরাধিকার ঘোষণার সময় পান নি, কেবল একেবারে শেষ
সময়ে প্রিয় সেনাপতি Perdiccas এর হাতে স্ব-নামাঙ্কিত অঙ্গুরি
দিয়ে যান। মৃত্যুকালে, নিজস্ব বৈধ কোনও সন্তান ছিল না। পারশীক
উপপত্নী Barsine একমাত্র পুত্র Heraclis বৈধতার কারণেই ধর্তব্যের
বাইরে। প্রসঙ্গত – আলেকজান্ডারের তিন পত্নী – প্রথমে ৩২৭ অব্দে
সগদিয়ার (মতান্তরে ব্যাকট্রিয়া)রাজকুমারী রোজান (Roxanne) এর
সঙ্গে বিবাহ, পরে ভারত অভিযানের পর ৩২৪ অব্দে দরায়ুস কন্যা স্তাতিরা
(Statira) ও ভ্রাতুষ্পুত্রীর পাণিগ্রহণ। তার মৃত্যুকালে রোজান
ও স্তাতিরা উভয়েই সন্তানসম্ভবা ছিলেন।
সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী নির্ণয়ের জন্যই মৃত্যুর
পরের দিনই, আলেকজান্ডারের প্রধান সেনাপতিরা ব্যাবিলনেই এক সভায়
মিলিত হন। প্রধান সেনাপতি Perdiccas, যার হাতে আলেকজান্ডার নামাঙ্কিত
অঙ্গুরি দিয়ে যান, তিনি প্রস্তাব করেন যে রোজান বা স্তাতিরা,
যে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, সেই হবে পরবর্তী সম্রাট। যতদিন
না পর্যন্ত পুত্র সাবালক হয়, তিনি নিজে তাদের অভিভাবক হিসেবে
রাজ্য পরিচালনা করবেন। স্বাভাবিক কারণেই, এই প্রস্তাব উপস্থিতদের
মনঃপুত না।
এরপর, নৌবাহিনীর প্রধান, Nearchusএর বক্তব্য যে বর্তমান পরিস্থিতিতে,
আলেকজান্ডারের সন্তানের বৈধতার প্রশ্ন না তুলে, Heraclisকেই
সম্রাট করা উচিত। উপস্থিতদের ধারনা যে, ক্ষমতা নিজে অধিকারের
জন্যই Nearchusএর এই প্রস্তাব, কারণ Barsineএর কন্যা তার পত্নী।
Ptolemi ছিলেন আলেকজান্ডারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অন্যতম। তিনি প্রস্তাব
করেন যে, একক সম্রাটের বদলে এক যৌথ গোষ্ঠীর হাতে সাম্রাজ্য পরিচালনার
ভার থাকা উচিত।
আলেকজান্ডারের পিতা Phillipএর Arridaeus নামে
এক জারজ পুত্র ছিল। দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য তাকে একটু
অগোচরেই রাখা হতো। পদাতিক বাহিনীর নেতা Meleagerএর মতে Arridaeusই
ভাবী সম্রাট আর ঐ সভার মধ্যেই তিনি Perdiccas এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণা করেন। গৃহযুদ্ধ এড়াবার জন্য সভা মুলতুবি রাখা হয়, কিন্তু
Meleagerএর দল নাছোড়বান্দা – ব্যাবিলনেই Perdiccas আর Meleagerএর
দলের এক ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়। Meleager প্রাণ হারান।
পরে ঠিক হয় যে, Arridaeusই সম্রাট এবং Phillip
III নাম গ্রহণ করবেন। রোজানএর পুত্র হলে পরে, সেই পুত্রই Alexander
IV নামে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে। সাবালক না হওয়া পর্যন্ত,
Perdiccasই Arridaeus আর Alexander IV এর অভিভাবক হিশেবে রাজ্য
পরিচালনা করবেন। Perdiccas শান্তি বজায় রাখবার জন্য সেনা প্রধানদের
সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসক (satrap)নিযুক্ত করেন। এই
ব্যবস্থায় কিছুদিন পরিস্থিতি শান্ত থাকে।
ইতিমধ্যে, রোজান Macedonia যাত্রার প্রাক্বালে
অনুচর মারফত সন্তানসম্ভবা স্তাতিরাকে হত্যা করান। কারণ – প্রতিদ্বন্দ্বী
কমানো, যাতে স্তাতিরার ভাবি সন্তান সিংহাসনের দাবিদার না হতে
পারে।
আর এক ঘটনা – আলেকজান্ডারের শব চুরি। ব্যাবিলনের সভার চুক্তি
অনুযায়ী, মিশর ও লিবিয়ার শাসনভার Ptolemi’র ওপর ন্যস্ত হয়। Ptolemi
কিন্তু প্রকাশ্য ঘোষণা না করলেও, নিজেকে স্বাধীন মনে করেন ও
তার সেনারাও তা মেনে নেয়। Perdiccas যখন আলেকজান্ডারের শব Macedonia
অভিমুখে পাঠান, পথিমধ্যে Syria’র উপকুলে সেই শব Macedoniaগামী
জাহাজে না তুলে, Ptolemi’র চক্রান্তে Alexandria’র জাহাজে তোলা
হয়। Ptolemi সকলকে বোঝান যে, আলেকজান্ডারের মৃত্যু সময়ের নির্দেশ
ছিল যে তাকে যেন Ammonএর মন্দিরে সমাহিত করা হয়। সেই অনুযায়ী
শব মিশরে আনা হয় ও আলেকজান্দ্রিয়ায় সমাহিত করা হয়।
৩২২ সালের শেষের দিকে, গৃহযুদ্ধ বেধে ওঠে ।এই
প্রথম ডায়াডচ যুদ্ধ। আরম্ভ Macedonia থেকে। Antipater ও Craterus
এর বিদ্রোহ। এদের সঙ্গে যোগ দেন Antigonus। প্রাথমিক কারণ অবশ্য
এক সামাজিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে । Antipater ক্ষমতার বন্ধন দৃঢ়
করবার জন্য, Perdiccasএর সঙ্গে নিজের কন্যা Nicaea’র বিবাহের
আয়োজন করেন। কিন্তু বিবাহের প্রাক্কালে, Perdiccas ঐ সম্বন্ধ
ভেঙ্গে আলেকজান্ডারের ভগ্নী Cleopatra’র পাণিগ্রহণ করেন, যাতে
ভবিষ্যতে তার পুত্রই সিংহাসনের অধিকারী হতে পারে আর Perdiccasএর
ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়। স্বভাবতই এতে Antipater অপমানিত ও ক্ষুব্ধ
হন। Antigonusএর ক্ষোভের কারণ অবশ্য যুদ্ধ সংক্রান্ত। Perdiccas
যখন Cappadocia’র (বর্তমানে তুরস্কের একটি অঞ্চল) বিদ্রোহ দমনে
ব্যস্ত, তখন সাহায্যের জন্য ঐ অঞ্চলের satrap Antigonusএর কাছে
সৈন্য চেয়ে পাঠান। Antigonus ঐ নির্দেশ না মানায় Cappadocia’র
অভিযানের পর Perdiccas কৈফিয়ত দাবি করেন ও বিচারের জন্য এক সামরিক
আদালতে হাজির হতে বলেন। Antigonus নিজেকে বাঁচাতে Antipater’র
দলে যোগ দেন। এই Antigonus, আমাদের পরিচিত দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের
চন্দ্রগুপ্ত নাটকের চরিত্র। আসল নাম Antigonus Monophthalmus
(এক চক্ষু)।
Perdiccas Macedonia’র পরিস্থিতি একটু সামলে,
Ptolemi’কে শায়েস্তা করতে সেনাবাহিনী নিয়ে মিশরে পৌঁছান। নীলনদের
বদ্বীপের একেবারে পূর্বপ্রান্তের Pelusium শহর থেকে আলেকজান্দ্রা
অভিমুখে যুদ্ধযাত্রা সুরু হয়। কয়েকবার চেষ্টা করেও, সেনাবাহিনী
নীলনদের শাখাগুলো অতিক্রম করতে অসমর্থ হয়। সময়টাও অনুকূলে ছিল
না – নীল নদীর প্লাবনের সময়। সেনাপতির ক্রমাগত পীড়নে, সেনানায়করা
সবাই পরিশ্রান্ত ও অসন্তুষ্ট। সঙ্কট এড়াবার জন্য Perdiccas নিজের
বিশ্বস্ত অনুচর – Peithon, Antigenes ও Seleucusকে আলোচনার জন্য
নিজের শিবিরে দেকে পাঠান। এই তিনজনই ক্ষমতার রাজনীতির খেলায়
বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। তারা গৃহযুদ্ধ বন্ধ করবার জন্যই ঐ সামরিক
শিবিরেই Perdiccasকে হত্যা করে। Ptolemi’র সাথে দেখা করে তাকে
নাবালক রাজাদের অভিভাবকত্ব আর সাম্রাজ্য শাসনের ভার নিতে অনুরোধ
করেন। কিন্তু Ptolemi মিশর ছেড়ে অনিশ্চয়তার পা বাড়াতে রাজি হলেন
না। Antipater কিন্তু এই ঘটনায় মোটেই খুশী না – তিনি চেয়ে ছিলেন
যে তার নাম রাজ অভিভাবক হিসেবে প্রস্তাবিত হোক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে
আলেকজান্ডারের সব যুযুধান সেনাপতিরা সমঝোতার জন্য সিরিয়ার গ্রীক
শহর Triparadisus (Baalbeq)এ মিলিত হন। এই চুক্তি পত্র অনুযায়ী,
Ptolemi মিশর ও লিবিয়ার শাসক, Antipater নাবালক দুই রাজার অভিভাবক
ও Macedonia’র সিংহাসন, Seleucus ব্যবিলন ও ব্যাকট্রিয়ার শাসনকর্তা,
Peithonএর হাতে Media, Antigonas এর ওপর Lycia, Phrygia, Lyconia
ও Pamphylia (বর্তমান তুরস্কের নানা অঞ্চল) শাসনভার অর্পিত হয়।
Macedonia’র এই বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকদের অপর কোনও কর্তৃত্ব রইল
না – কেবল মিত্রতার খাতিরে পরামর্শদাতা।
এই গেল প্রথম যুদ্ধ। এর মাত্র তিন বছর বাদে
দ্বিতীয় যুদ্ধ। দুই আলাদা যুদ্ধ – ইউরোপ ও এশিয়ায়। ৩১৯ সালে
Antipater বার্ধক্যের দরুন মারা যান। তার অধীনস্থ এক সুযোগ্য
সেনাপতি Polyperchonকে তিনি তার উত্তরাধিকারী করে যান। Polyperchon
রাজাদের অভিভাবক ও দুই রাজমাতা রোজান ও অলিম্পিয়ার রক্ষক হিসেবে
শাসনভার গ্রহণ করেন। এই ব্যবস্থা কিন্তু Antipaterএর পুত্র Cassander
মানতে নারাজ। Cassander, Ptolemi’র সমর্থনে Polyperchonএর বিরুদ্ধতা
ঘোষণা করে। Antigonas ও এই পক্ষে যোগ দেন। এরা দুজনেই Cassanderকে
সেনা দিয়ে সাহায্য করে। Cassander নিজেও দেশের জনমত তার পক্ষে
আনতে সমর্থ হন। অবস্থা বেগতিক দেখে Polyperchon, রোজান ও শিশু
আলেকজান্ডারকে নিয়ে Epirusএ পলায়ন করেন। পরে রাজমাতা অলিম্পিয়া
ও Arrideus (Phillip IV) সেখানে যান। Polyperchon গ্রীসের নগর
রাষ্ট্রগুলো থেকে আর Epirus থেকে সৈন্য সংগ্রহ আরম্ভ করেন। যুদ্ধের
পূর্বেই সেনাদের এক বড় অংশ Cassander দলে যায়। যুদ্ধের ফল -
Polyperchon মৃত্যু ও Arrideus (Phillip IV)এর হত্যা। রাজমাতা
অলিম্পিয়া, রোজান ও শিশু আলেকজান্ডারকে নিয়ে, Mount Olympusএর
কাছে এক পরিত্যক্ত দুর্গে আত্মগোপন করেন। Cassanderএর এক বাহিনী
দুর্গে হাজির হয় , রাজমাতা আত্মসমর্পণ করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই
রাজমাতাকে হত্যা করা হয় আর রোজান ও শিশু আলেকজান্ডার প্রাসাদে
বন্দী থাকে। বছর খানেক বাদে তাদের হত্যা করা হয়। Cassander ইউরোপে
অধিকৃত দেশ সমূহের সর্বময় করতা হিসেবে Macedoniaর সিংহাসন আরোহণ
করেন।
পুব দেশের যুদ্ধ বেশ ঘোরালো। Antigonas এই যুদ্ধে
নিজে অংশগ্রহণ করেন। প্রথমে Cappadocia ও Lydia অধিকারে আনেন।
এরপর পারস্য অভিমুখে যাত্রা করেন। Seleucus ব্যাবিলন ছেড়ে Ptolemy’র
কাছে পলায়ন করেন। Antigonas ব্যাবিলন ও মিডিয়া দখল করে নিজের
অনুচরদের সেখানকার শাসক নিযুক্ত করেন। ভারতের সমস্ত অধিকার কিন্তু
এসময় হারিয়ে যায় ও চন্দ্রগুপ্তের অধিকারে আসে।
এই গেল দ্বিতীয় যুদ্ধ যার অবসান ৩১৬ সালে।
এর পর আরও দুটো যুদ্ধ, কারও কারো মতে তিনটে।
এক যুদ্ধে Seleucus নিজের পুরনো অধিকার ফিরে পান। ব্যাকট্রিয়া,
ব্যাবিলন, এলাম সহ এশিয়ার মুল ভূখণ্ড নিজের অধিকারে আসে। সম্ভবত
২৮৫ সাল নাগাদ আবার উত্তরপূর্ব ভারতও তার সাম্রাজ্যের অন্তর্গত
হয়।